১১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ছোটবেলার ইচ্ছা থেকেই ‘স্বপ্ন সিঁড়ি’ দিয়ে উপরে ওঠার যাত্রা শুরু 

চুয়াডাঙ্গার নারী উদ্যোক্তা নাজমিন শিলার হাতে বানানো খাবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

ছোটবেলার ইচ্ছা থেকেইে স্বপ্ন সিড়ি দিয়ে উপরে ওঠার যাত্রা শুরু চুয়াডাঙ্গার উদিয়মান উদ্যোক্তা নাজমিন শিলা। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরণের হাতে বানানোর খাবারের ভিডিও দেখে অনুপ্রেরণা জাগে মনে। সাংসারিক দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি শখের বসে নিজ হাতে বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করেন।

পরিবারের অনুপ্রেরনায় অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খাবার বিক্রি শুরু করেন। হাটি হাটি পা পা করে যাত্রা শুরু। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। নিজ জেলার গন্ডি পেরিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তার তৈরি খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সারাদেশেই তার হাতে বানানো খাবার ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সাংসারিক কাজের পাশপাশি একজন ‘সফল উদ্যোক্তা’র দৌঁড়ে তার রয়েছে প্রানপন চেষ্টা। স্বামী আহসান আলমের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় সংসারে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে “স্বপ্ন সিড়ি” নামে গড়ে তুলেছেন একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান। প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিভিন্ন রকমের খাবার আইটেম বিক্রি করে আয় করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। যা সাংসারিক ব্যয়ে বড় একটা অবদান রেখে চলেছেন তিনি। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হতে পারেন এটাই তার উদাহরণ।
উদিয়মান নারী উদ্যোক্তা নাজমিন শিলা চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতালে এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্বামী আহসান আলম ও তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। বড় ছেলে আহসান সাফিন তাহা চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে আহসান সাদিক তাফসির চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত আছে।
নাজমিন শিলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আইটেমের হালুয়া, মাংসের আচার, নাড়ু তৈরি করছেন নিজ হাতেই। সব থেকে নারকেলের নাড়ু, মাংসের আচার ও ছোলার হালুয়া চাহিদার শীর্ষে বলে জানান তিনি।
তার খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিরিঞ্জ পিঠা, ছোলার ডালের বড়ফি, হালুয়া, পুলি পিঠা, পায়েস, নারকেলের নাড়ু, গরুর মাংসের আচার, রসুনের আচার, আমের আচারসহ বিভিন্ন আইটেমের আচার, ফ্রোজেন করা খাবার, সামুচা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, চিকেন মোমো, পটেটো চিপস। একান্ত আলাপচারিতায় নাজমিন শিলা আমাদের চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছোট থেকেই রান্না-বান্নার দিকে আগ্রহ ছিল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খাবার বানানো ভিডিও দেখি। নিজ প্রচেষ্টায় দুই তিন রকমের  খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করি। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু হয়। ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
এরপর নিজ হাতে তৈরি ১৫-২০ রকম খাবার বানিয়ে অর্ডার নিতে শুরু করি। এখন গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার অর্ডার হচ্ছে। আশা করি খাবারের চাহিদা আরও বাড়বে। খাবারের আইটেমও বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার তৈরিকৃত খাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্বপ্ন সিড়ি’ নামে পেইজ থেকে সেল করি। অর্ডারের খাবার নিখুঁতভাবে এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিই। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার এবং ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাস্টমাররা অর্ডার করে। তাদের সঠিক সময়ের মধ্যেই কুরিয়ার সার্ভিসে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়। আশপাশে কেউ অর্ডার করলে আমার স্বামী নিজেই ডেলিভারি বয় এর কাজ করেন। তিনি নিজে গিয়ে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে আসেন কাস্টমারদের কাছে। তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন।
স্বামী আহসান আলম বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম প্রত্যকেই খাবার বাড়িতেই তৈরি করেন। তবে তার কাজের আগ্রহ ও নিজের তৈরিকৃত খাবারের চাহিদা দেখে উৎসাহিত করি। ছেলেদের লালনপালন ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ একাই করে আমার স্ত্রী। সাংসারিক ব্যয়ের দিক থেকেও সে বড় সাপোর্ট দিছে। তাই অস্বচ্ছল নারীরাও হোমমেড খাবার তৈরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা খুব সহজেই ফিরিয়ে আনতে পাবে বলে মনে করি।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, এখন নারীরা মেধা ও পরিশ্রম করলে খুব সহজে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এতে পরিবারের স্বচ্ছলতা যেমন আসছে, তেমনি সংসারে যাবতীয় ব্যয়ে স্বামীর পাশাপাশি তারাও সাপোর্ট দিচ্ছে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নারীদের এ ধরণের কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
Tag :
এখন আলোচনায়

ভেড়ামারা বাসষ্ট্যান্ডে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বুলবুল হাসান পিপুল’র পথসভা অনুষ্ঠিত

ছোটবেলার ইচ্ছা থেকেই ‘স্বপ্ন সিঁড়ি’ দিয়ে উপরে ওঠার যাত্রা শুরু 

চুয়াডাঙ্গার নারী উদ্যোক্তা নাজমিন শিলার হাতে বানানো খাবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

আপডেট সময় : ০২:১০:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

ছোটবেলার ইচ্ছা থেকেইে স্বপ্ন সিড়ি দিয়ে উপরে ওঠার যাত্রা শুরু চুয়াডাঙ্গার উদিয়মান উদ্যোক্তা নাজমিন শিলা। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরণের হাতে বানানোর খাবারের ভিডিও দেখে অনুপ্রেরণা জাগে মনে। সাংসারিক দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি শখের বসে নিজ হাতে বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করেন।

পরিবারের অনুপ্রেরনায় অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খাবার বিক্রি শুরু করেন। হাটি হাটি পা পা করে যাত্রা শুরু। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। নিজ জেলার গন্ডি পেরিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তার তৈরি খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সারাদেশেই তার হাতে বানানো খাবার ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সাংসারিক কাজের পাশপাশি একজন ‘সফল উদ্যোক্তা’র দৌঁড়ে তার রয়েছে প্রানপন চেষ্টা। স্বামী আহসান আলমের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় সংসারে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে “স্বপ্ন সিড়ি” নামে গড়ে তুলেছেন একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান। প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিভিন্ন রকমের খাবার আইটেম বিক্রি করে আয় করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। যা সাংসারিক ব্যয়ে বড় একটা অবদান রেখে চলেছেন তিনি। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হতে পারেন এটাই তার উদাহরণ।
উদিয়মান নারী উদ্যোক্তা নাজমিন শিলা চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতালে এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্বামী আহসান আলম ও তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। বড় ছেলে আহসান সাফিন তাহা চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে আহসান সাদিক তাফসির চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত আছে।
নাজমিন শিলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আইটেমের হালুয়া, মাংসের আচার, নাড়ু তৈরি করছেন নিজ হাতেই। সব থেকে নারকেলের নাড়ু, মাংসের আচার ও ছোলার হালুয়া চাহিদার শীর্ষে বলে জানান তিনি।
তার খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিরিঞ্জ পিঠা, ছোলার ডালের বড়ফি, হালুয়া, পুলি পিঠা, পায়েস, নারকেলের নাড়ু, গরুর মাংসের আচার, রসুনের আচার, আমের আচারসহ বিভিন্ন আইটেমের আচার, ফ্রোজেন করা খাবার, সামুচা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, চিকেন মোমো, পটেটো চিপস। একান্ত আলাপচারিতায় নাজমিন শিলা আমাদের চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছোট থেকেই রান্না-বান্নার দিকে আগ্রহ ছিল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খাবার বানানো ভিডিও দেখি। নিজ প্রচেষ্টায় দুই তিন রকমের  খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করি। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু হয়। ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
এরপর নিজ হাতে তৈরি ১৫-২০ রকম খাবার বানিয়ে অর্ডার নিতে শুরু করি। এখন গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার অর্ডার হচ্ছে। আশা করি খাবারের চাহিদা আরও বাড়বে। খাবারের আইটেমও বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার তৈরিকৃত খাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্বপ্ন সিড়ি’ নামে পেইজ থেকে সেল করি। অর্ডারের খাবার নিখুঁতভাবে এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিই। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার এবং ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাস্টমাররা অর্ডার করে। তাদের সঠিক সময়ের মধ্যেই কুরিয়ার সার্ভিসে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়। আশপাশে কেউ অর্ডার করলে আমার স্বামী নিজেই ডেলিভারি বয় এর কাজ করেন। তিনি নিজে গিয়ে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে আসেন কাস্টমারদের কাছে। তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন।
স্বামী আহসান আলম বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম প্রত্যকেই খাবার বাড়িতেই তৈরি করেন। তবে তার কাজের আগ্রহ ও নিজের তৈরিকৃত খাবারের চাহিদা দেখে উৎসাহিত করি। ছেলেদের লালনপালন ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ একাই করে আমার স্ত্রী। সাংসারিক ব্যয়ের দিক থেকেও সে বড় সাপোর্ট দিছে। তাই অস্বচ্ছল নারীরাও হোমমেড খাবার তৈরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা খুব সহজেই ফিরিয়ে আনতে পাবে বলে মনে করি।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, এখন নারীরা মেধা ও পরিশ্রম করলে খুব সহজে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এতে পরিবারের স্বচ্ছলতা যেমন আসছে, তেমনি সংসারে যাবতীয় ব্যয়ে স্বামীর পাশাপাশি তারাও সাপোর্ট দিচ্ছে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নারীদের এ ধরণের কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।