০৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিল্লিদের বাঁশিওয়ালা ২

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩১:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১৩১ Time View

অনলাইন ডেস্ক: ক’দিন আগে বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় পত্রিকা প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে বিড়ালদের নিয়ে কুয়েতের এক প্রাণীবান্ধব ব্যক্তির এক বিকেলের কার্যক্রম নিয়ে ‘বিল্লিদের বাঁশিওয়ালা’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কথিকা। লেখাটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে লেখার চেয়ে ঘটনাটি মন ছুঁয়েছে বহুজনের। অনেকে প্রশংসা করেছেন বিড়ালদের প্রতি তার মমত্ত্ববোধ দেখে। ক’জন অবশ্য বলেছেন, অনেকেইতো অতি যত্নে বিড়াল পোষেণ; তারা অবশ্য একমত হয়েছেন যে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এসব বিড়ালগুলোকে বাঁচাতে তার মমতা মেশানো এ অনুভূতির অবশ্য ভিন্ন আবেদন রয়েছে।

অনলাইন ভার্সনে প্রাকাশিত এ লেখা পড়ার সূত্রে খোঁজ মিলে আরেক বিল্লিদের বাঁশিওয়ালার। তিনি একজন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি নারী। পঞ্চাশোর্ধ্ব এ ভদ্র মহিলা কুয়েতে কাজ করেন ২০০৫ সাল থেকে। কুয়েতের কল-কারখানা অধ্যুষিত সুয়েখ প্রশাসনিক এলাকায় অবস্থিত সাবাহ হাসপাতালের মেডিক্যাল বিভাগের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন তিনি। সেখানকার মেডিক্যাল আইসিইউতে ভর্তি আমার এক পরিচিতজনকে দেখতে যাওয়ার সূত্রে তার সাথে কথা হয়। কাজ-কর্মে নিষ্ঠাবান ও দক্ষ, ভিন দেশি হলেও রোগীর সেবায় একনিষ্ঠ। এ কারণে নারী হয়েও সুপারভাইজার পদে কাজ করছেন।

ওয়ার্ড থেকে বের হতেই বেশ কয়েকটি বিড়াল তার পিছু নেয়, তার চারপাশে ঘুরাফেরা করে। কথা হয় তার বিড়ালদের সাথে সখ্যতা নিয়ে। এর মধ্যেই সিড়ি ঘরের কার্ণিশ থেকে মিঞ মিঞ শব্দ করে দু’টি বিড়ালকে ডেকে আনলেন। কারণ জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, অতিরিক্ত খুনসুটির এক পর্যায়ে ধমক দিলে অভিমান করে কার্ণিশে লুকিয়ে ছিল এরা। এ দু’টি বিড়াল নাকি খুব অভিমানী। একদিন দেরিতে আসলে ওদের ভাগের খাবার শেষ হয়ে যায়। সেজন্য নাকি অভিমান করে চলে গিয়েছিল, রাতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দিন তিনি বিভাগে আসতেই দেখেন দু’টি বিড়াল বিভাগের প্রবেশ পথে অপেক্ষা করছে। অভিমান ভেঙে স্বাগত জানানোর কায়দায় খুনসুটি শুরু করে বিড়াল দু’টি। নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ কিংবা রাতে ডিউটির সময় ঐ নারীর মেনুতে যে চিকেন থাকে, তা নিজে না খেয়ে বিড়ালদের জন্য রেখে দেন। কোন রোগীর খাবারের পর চিকেন অবশিষ্ট থাকলে তা সযত্নে জমা করেন আদরের বিড়ালদের জন্য।

জানা গেল, শুধু কর্মস্থলে নয়; আবাসিক ডরমেটরিতেও বেশ কয়েকটি বিড়াল দেখাশুনা করেন তিনি। দেশেও তার বিড়াল পোষার সখ ছিল। করোনার আগে ছুটিতে গিয়ে তিনটি বিড়াল রেখে এসেছিলেন। এখন আরও দু’টি বেড়েছে। একমাত্র ছেলেও তার সাথেই কুয়েত প্রবাসী। ষাটোর্ধ্ব স্বামীই ওগুলোকে দেখাশুনা করেন। বললেন, স্বামীরও রয়েছে বিড়ালদের প্রতি ভালবাসা ও অপাত্য স্নেহ। দেশে তার সাথে কথা বলার সময় হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলে নিয়মিত বিড়ালগুলোকে দেখানো চাইই চাই। তার অবসর সময়ের বেশির ভাগ কাটে তার কর্মস্থল, বাসা ও আশেপাশের বিড়ালদের দেখাশুনা ও দেশে রেখে আসা বিড়ালগুলোর নিয়মিত হাল হকিকত জেনে।

শুধু শখ থেকে নয়, বিড়ালদের প্রতি মায়া থেকেই এদের নিয়ে তার পথ চলা। সৃষ্টির সেরা জীব এমন জানা অজানা মানুষ আছে, যারা পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকে মায়া মমতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছেন। ওদের ভাষা বোধগম্য না হলেও, শরীরি ভাষা বুঝে। আবেদনগুলোকে অনুভূতি ও মায়া দিয়ে পূরণের চেষ্টা করে যান নিরন্তর। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ

Tag :
এখন আলোচনায়

ভেড়ামারা বাসষ্ট্যান্ডে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বুলবুল হাসান পিপুল’র পথসভা অনুষ্ঠিত

বিল্লিদের বাঁশিওয়ালা ২

আপডেট সময় : ০৬:৩১:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক: ক’দিন আগে বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় পত্রিকা প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে বিড়ালদের নিয়ে কুয়েতের এক প্রাণীবান্ধব ব্যক্তির এক বিকেলের কার্যক্রম নিয়ে ‘বিল্লিদের বাঁশিওয়ালা’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কথিকা। লেখাটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে লেখার চেয়ে ঘটনাটি মন ছুঁয়েছে বহুজনের। অনেকে প্রশংসা করেছেন বিড়ালদের প্রতি তার মমত্ত্ববোধ দেখে। ক’জন অবশ্য বলেছেন, অনেকেইতো অতি যত্নে বিড়াল পোষেণ; তারা অবশ্য একমত হয়েছেন যে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এসব বিড়ালগুলোকে বাঁচাতে তার মমতা মেশানো এ অনুভূতির অবশ্য ভিন্ন আবেদন রয়েছে।

অনলাইন ভার্সনে প্রাকাশিত এ লেখা পড়ার সূত্রে খোঁজ মিলে আরেক বিল্লিদের বাঁশিওয়ালার। তিনি একজন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি নারী। পঞ্চাশোর্ধ্ব এ ভদ্র মহিলা কুয়েতে কাজ করেন ২০০৫ সাল থেকে। কুয়েতের কল-কারখানা অধ্যুষিত সুয়েখ প্রশাসনিক এলাকায় অবস্থিত সাবাহ হাসপাতালের মেডিক্যাল বিভাগের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন তিনি। সেখানকার মেডিক্যাল আইসিইউতে ভর্তি আমার এক পরিচিতজনকে দেখতে যাওয়ার সূত্রে তার সাথে কথা হয়। কাজ-কর্মে নিষ্ঠাবান ও দক্ষ, ভিন দেশি হলেও রোগীর সেবায় একনিষ্ঠ। এ কারণে নারী হয়েও সুপারভাইজার পদে কাজ করছেন।

ওয়ার্ড থেকে বের হতেই বেশ কয়েকটি বিড়াল তার পিছু নেয়, তার চারপাশে ঘুরাফেরা করে। কথা হয় তার বিড়ালদের সাথে সখ্যতা নিয়ে। এর মধ্যেই সিড়ি ঘরের কার্ণিশ থেকে মিঞ মিঞ শব্দ করে দু’টি বিড়ালকে ডেকে আনলেন। কারণ জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, অতিরিক্ত খুনসুটির এক পর্যায়ে ধমক দিলে অভিমান করে কার্ণিশে লুকিয়ে ছিল এরা। এ দু’টি বিড়াল নাকি খুব অভিমানী। একদিন দেরিতে আসলে ওদের ভাগের খাবার শেষ হয়ে যায়। সেজন্য নাকি অভিমান করে চলে গিয়েছিল, রাতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দিন তিনি বিভাগে আসতেই দেখেন দু’টি বিড়াল বিভাগের প্রবেশ পথে অপেক্ষা করছে। অভিমান ভেঙে স্বাগত জানানোর কায়দায় খুনসুটি শুরু করে বিড়াল দু’টি। নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ কিংবা রাতে ডিউটির সময় ঐ নারীর মেনুতে যে চিকেন থাকে, তা নিজে না খেয়ে বিড়ালদের জন্য রেখে দেন। কোন রোগীর খাবারের পর চিকেন অবশিষ্ট থাকলে তা সযত্নে জমা করেন আদরের বিড়ালদের জন্য।

জানা গেল, শুধু কর্মস্থলে নয়; আবাসিক ডরমেটরিতেও বেশ কয়েকটি বিড়াল দেখাশুনা করেন তিনি। দেশেও তার বিড়াল পোষার সখ ছিল। করোনার আগে ছুটিতে গিয়ে তিনটি বিড়াল রেখে এসেছিলেন। এখন আরও দু’টি বেড়েছে। একমাত্র ছেলেও তার সাথেই কুয়েত প্রবাসী। ষাটোর্ধ্ব স্বামীই ওগুলোকে দেখাশুনা করেন। বললেন, স্বামীরও রয়েছে বিড়ালদের প্রতি ভালবাসা ও অপাত্য স্নেহ। দেশে তার সাথে কথা বলার সময় হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলে নিয়মিত বিড়ালগুলোকে দেখানো চাইই চাই। তার অবসর সময়ের বেশির ভাগ কাটে তার কর্মস্থল, বাসা ও আশেপাশের বিড়ালদের দেখাশুনা ও দেশে রেখে আসা বিড়ালগুলোর নিয়মিত হাল হকিকত জেনে।

শুধু শখ থেকে নয়, বিড়ালদের প্রতি মায়া থেকেই এদের নিয়ে তার পথ চলা। সৃষ্টির সেরা জীব এমন জানা অজানা মানুষ আছে, যারা পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকে মায়া মমতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছেন। ওদের ভাষা বোধগম্য না হলেও, শরীরি ভাষা বুঝে। আবেদনগুলোকে অনুভূতি ও মায়া দিয়ে পূরণের চেষ্টা করে যান নিরন্তর। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ