১২:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওষুধ ও কসমেটিক আইন-২০২৩, শুধু আইন নয় প্রয়োগ করতে হবে

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১৩১ Time View

ওষুধ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন করে ‘ওষুধ ও কসমেটিক আইন-২০২৩’ প্রণয়ন করছে সরকার। গত ৬ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রিপরিষদ সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনে বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাশাপাশি নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এই আইনে। এর আগে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে এবং এই ওষুধ যাতে সহজে চেনা যায় সেজন্য এ ওষুধের মোড়কের বড় অংশজুড়ে লাল রঙে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ লেখার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। দেশে দেদার তৈরী ও বিক্রি হচ্ছে নকল-ভেজাল ওষুধ। আর প্রতারিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। এমনই অবস্থায় ওষুধে ভেজাল প্রতিরোধে নতুন আইন প্রণয়ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প একটি দ্রুত বিকাশমান শিল্প খাত। একসময় যেখানে চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানী করা হতো সেখানে বর্তমানে ৯৭ শতাংশেরও অধিক ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ এখন বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে রপ্তানী হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশীয় কোম্পানী উন্নত দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সনদ লাভ করেছে। ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অর্জন করায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বর্তমানে প্রচলিত ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর প্রায় সব ধরণের ডোসেজ ফর্মই উৎপাদনে সক্ষম।

ঔষধ প্রশাসনের তথ্য মতে, দেশে এলোপ্যাথিক ওষুধ কারখানার সংখ্যা ২৮১টি, ইউনানি ২৬৬টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হারবাল ৩২টি। এসব কারখানায় মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। বাংলাদেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়াও হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। এরপরও এখানে ওষুধ টেস্টিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্যের কাছে প্রশাসনও যেন অসহায়। মিটফোর্ড এলাকায় গিয়ে মোবাইল কোর্টেরও হেনস্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকজন এই নকল-ভেজাল ওষুধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। মানহীন ওষুধ তৈরী ও বাজারজাত জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকী। এই খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ।

অন্যদিকে আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি কম হওয়াও বড় কারণ। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদক-বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। এই চক্র যত ক্ষমতাবানই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

Tag :
এখন আলোচনায়

ভেড়ামারা বাসষ্ট্যান্ডে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বুলবুল হাসান পিপুল’র পথসভা অনুষ্ঠিত

ওষুধ ও কসমেটিক আইন-২০২৩, শুধু আইন নয় প্রয়োগ করতে হবে

আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ওষুধ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন করে ‘ওষুধ ও কসমেটিক আইন-২০২৩’ প্রণয়ন করছে সরকার। গত ৬ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রিপরিষদ সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনে বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাশাপাশি নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এই আইনে। এর আগে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে এবং এই ওষুধ যাতে সহজে চেনা যায় সেজন্য এ ওষুধের মোড়কের বড় অংশজুড়ে লাল রঙে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ লেখার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। দেশে দেদার তৈরী ও বিক্রি হচ্ছে নকল-ভেজাল ওষুধ। আর প্রতারিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। এমনই অবস্থায় ওষুধে ভেজাল প্রতিরোধে নতুন আইন প্রণয়ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প একটি দ্রুত বিকাশমান শিল্প খাত। একসময় যেখানে চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানী করা হতো সেখানে বর্তমানে ৯৭ শতাংশেরও অধিক ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ এখন বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে রপ্তানী হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশীয় কোম্পানী উন্নত দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সনদ লাভ করেছে। ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অর্জন করায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বর্তমানে প্রচলিত ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর প্রায় সব ধরণের ডোসেজ ফর্মই উৎপাদনে সক্ষম।

ঔষধ প্রশাসনের তথ্য মতে, দেশে এলোপ্যাথিক ওষুধ কারখানার সংখ্যা ২৮১টি, ইউনানি ২৬৬টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হারবাল ৩২টি। এসব কারখানায় মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। বাংলাদেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়াও হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। এরপরও এখানে ওষুধ টেস্টিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্যের কাছে প্রশাসনও যেন অসহায়। মিটফোর্ড এলাকায় গিয়ে মোবাইল কোর্টেরও হেনস্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকজন এই নকল-ভেজাল ওষুধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। মানহীন ওষুধ তৈরী ও বাজারজাত জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকী। এই খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ।

অন্যদিকে আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি কম হওয়াও বড় কারণ। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদক-বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। এই চক্র যত ক্ষমতাবানই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।