বুধবার, ০৬ Jul ২০২২, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো। অস্ত্রোপচার করা রোগী সুস্থ আছেন।
বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির ৪২ বছর বয়সী এক নারীর হৃদপিণ্ডে এই যান্ত্রিক হৃৎপিণ্ড বা (Left Ventricular Assist Device-LVAD) এল্ভ্যাড প্রতিস্থাপন করেন।
ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওই নারী দীর্ঘদিন হৃৎপিণ্ডের নানা জটিলতায় (শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর) ভুগছিলেন এবং দেশে-বিদেশে নানা চিকিৎসার পরও তার হৃৎপিণ্ড প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছিল।
সফল অস্ত্রোপচারের পর ইউনাইটেড হাসপাতাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে অস্ত্রোপচার দলের প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, যাদের হার্ট সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে তাদের জন্য এই চিকিৎসা। এ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি যন্ত্র হার্টের নিচে বসানো হয়। সফল অস্ত্রোপচার হলে এই যন্ত্র হার্টকে পাম্প করতে সহায়তা করে। এ কারণে একে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড বলা যাবে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি চার্জেবল ডিভাইস। হৃদযন্ত্রে বসানো হলে যদি চার্জ শেষ হয় তবে অটো সিগন্যাল পাওয়া যায়। যন্ত্রটি বসানোর ফলে হার্টের লাল রক্তকণিকা সচল হয়। স্বাভাবিক কাজ করে হার্ট। ফলে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে।’
BT-Newএই যন্ত্রটি হার্টের নিচে বসানো হয়
তবে যন্ত্রটির দাম এক কোটি টাকা জানিয়ে তিনি জানান, এর সঙ্গে অস্ত্রোপচারের খরচ যোগ হবে। তবে সফল অস্ত্রোপচার হলে রোগী দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল জানায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায়, পেতে দেরি হয় অথবা হার্টের অবস্থার যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা এল্ভ্যাড স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন– কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের উপযুক্ত না হলে তাদের জন্য একমাত্র বিকল্প এল্ভ্যাড, যা স্থাপনের মাধ্যমে বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার সহকর্মীরা প্রায় চার ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হার্টমেট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন।
আশা করা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণগুলোর উন্নতি ঘটবে।
ইউনাইটেড হাসপাতাল জানায়, বাংলাদেশে হার্ট সার্জারির প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল হাসপাতালের শুরু থেকে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টের সফল অস্ত্রোপচার করেছেন।
উল্লেখ্য, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও হার্ট অ্যাটাক, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, হার্ট ভাল্ভজনিত সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি হার্টের অস্বাভাবিক রিদম বা অ্যারেদমিয়া ইত্যাদি নানান রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে ‘হার্ট ফেইলিওর’।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দশ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত। আর এশিয়াতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এক দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ছয় দশমিক সাত শতাংশ। সূত্র: বাংলাট্রিবিউন