সোমবার, ০৮ অগাস্ট ২০২২, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন
দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হলো নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আফ্রিকান ধরন ‘ওমিক্রন’। আফ্রিকা থেকে ফেরা দুই নারী ক্রিকেটারের দেহে পাওয়া গেছে এই ভাইরাস। তারা সুস্থ আছেন এবং তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই অবস্থায় বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলো নজরদারি না বাড়ালে ‘ওমিক্রন’ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সতর্কতা অবলম্বনে ঘাটতি থাকায় মাশুল গুনতে হবে সাধারণ মানুষকে। তবে সংক্রমণ কমাতে জিনোম সিকোয়েন্স বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ইনডোর অনুষ্ঠান (বিবাহ, সমাবেশ ও জন্মদিন উৎসব) অচিরেই বন্ধ করতে হবে। সীমিত করতে হবে জনসমাগম।
নতুন করোনাভাইরাস মানবদেহে সংক্রমণের পর অসংখ্যবার রূপ বদল করলেও এক বছরের বেশী সময় পর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই মহামারির মাত্রা ভয়াবহ করে তোলে। এরপর টিকা যখন মহামারি নিয়ন্ত্রণের আশা দেখাচ্ছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরা পড়ে ভাইরাসটির নতুন রূপ ওমিক্রন। এরপর আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এর মধ্যেই জিম্বাবুয়েতে নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দল ঢাকায় পৌঁছানোর পর সব খেলোয়াড়দের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। সেখানে নমুনা পরীক্ষার পর দুজনের করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ প্রসঙ্গে বলেন, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া দুই নারী ক্রিকেটারকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। তারা সুস্থ আছেন। তাদের যে চিকিৎসা দরকার, সেটি চলছে। মাঝে মধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। হয়তো পুরোপুরি সেরে উঠতে দুই সপ্তাহ লাগবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ দুজনের আশপাশে যারা ছিলেন তাদেরও করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। আমরা কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করছি। যারা তাদের পাশে ছিলেন বা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন সবার পরীক্ষা করা হয়েছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, যেহেতু তারা ওই অঞ্চল (আফ্রিকা) সফর করে এসেছে, তাই তাদের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে আমি অবাক হইনি।এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্য দেশের পাশাপাশি ভারতেও ৩২ জনের মধ্যে ওমিক্রন শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্তের মাত্রা মৃদু। এটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বলে অভিমত করোনা বিশেষজ্ঞদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রায় ৬০টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এই ধরনে আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি। ব্যাপকভাবে জিনগত রূপ পরিবর্তনে সক্ষম এই ধরনের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ওমিক্রনের প্রকোপে দক্ষিণ আফ্রিকায় আক্রান্ত ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় জানিয়েছেন, ডেল্টা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া আগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতাও ওমিক্রনের রয়েছে। স্বল্প পরিসরে চালানো এক গবেষণা শেষে ফাইজার ও বায়োএনটেক জানিয়েছে, করোনার অন্য ধরনগুলোর বিরুদ্ধে টিকার দুটি ডোজ যে পরিমাণ সুরক্ষা দিয়ে এসেছে, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে একই সুরক্ষা পেতে প্রয়োজন হবে বাড়তি একটি ডোজের।
ওমিক্রমে দেশে শনাক্ত প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ওমিক্রন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এটাকে আটকানো যাবে না। তবে এটা বেশি ছড়ালেও অনেক বেশি ক্ষতিকর নয়; কারণ জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করানো হয় না। তাই আমাদের স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে সংক্রমণ কমাতে সতর্কতা বাড়াতে হবে।
কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে নজরদারী বাড়াতে হবে। দুই ডোজ টিকা না থাকলে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আর যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি সেখান থেকে কেউ এলে তাকে ১৪ দিনের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। জিনোম সিকোয়েন্স বাড়াতে হবে। আর যাদের ওমিক্রন পজিটিভ হবে কঠিন আইসোলেশনে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে ওমিক্রম সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এখন করোনা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমরা উদ্বিগ্ন এবং সতর্ক হব। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেসব জায়গায় মানুষের ভিড় হয়, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানায় সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইইডিসিআরর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। এখন ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা মৃত্যুর ঝুঁকি কম হলেও ছড়ায় বেশি। তাই মাস্ক পরা এবং ইনডোর (বিবাহ, জন্মদিন ও জনসমাবেশ) অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে।
আগারগাঁও ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ওমিক্রনে রোগী শনাক্ত হলেও আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টাকে আমরা মোকাবিলা করেছি, এটাকেও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সবার দরকার সচেতন হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সরকারের উচিত জনসমাগম সীমিত করায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা। আর ১৫ দফা সরকারি নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করা। এখন এখানে দিনে চার থেকে পাঁচজন নতুন করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে।