বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ–
নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ কচ্ছপিয়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি বেড়িবাঁধ এবং বন বিভাগের গাছ কেটে স্থানীয় একটি চক্রের বানিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলা মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা, মাদ্রাসার প্রভাবে হুমকির মুখে দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে এবিষয়ে কথা হয় স্থানীয় এলাকাবাসী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে।
দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাসেম জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের যায়গা দখল করে এবং বন বিভাগের গাছ কেটে ও একাদশ জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৪ জুলাই’১৯ তারিখের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিপরীতে মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা নামে একটি নুরানী (কওমী) মাদ্রাসা স্থাপন করে একটি চক্র। এতে করে বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে। তাছাড়া করোনা কালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকাবস্থায় প্রায় সকল শিক্ষার্থী মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যায়। বিদ্যালয় পুনরায় চালুর পর সেসব ছাত্র-ছাত্রীরা আর ফেরত আসেনি।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবুল বাসার, মো. সাইফুল ইসলাম, কংকর চন্দ্র দাস ও সীমান্তী বালা দাস বলেন, এ মাদ্রাসায় ৩শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণীতে ৮ জন থাকলেও নিয়মিত একজন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১৪ জন থাকলেও নিয়মিত একজন, তৃতীয় শ্রেণীতে ২১ জন থাকলেও নিয়মিত একজন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৩৫ জন থাকলেও নিয়মিত ১৯জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে মোট ৬০ জন থাকলেও নিয়মিত মোট ৩১জন শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয়ে মোট ৫৩ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। অথচ এই বিদ্যালয় থেকে বিগত বছরে ৮জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তিসহ মোট ১৪জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।
এবিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) সরকারি সম্পত্তিতে মাদ্রাসা করার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, যায়গাটি দখল সুত্রে তারা ক্রয় করেছে। তবে দ্রুত মাদ্রাসা পাশের নিজস্ব সম্পত্তিতে সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, সরকারি বিদ্যালয়ের পাশে এবং সরকারি সম্পত্তি দখল করে মাদ্রাসা করায় বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে। তারা ছাত্র-ছাত্রী মুখর বিদ্যালয় ফিরে পেতে সংশ্লীষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এহেন অবস্থা চলমান থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সুবর্ণচর উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি বিস্তারিত অবগত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানিয়েছেন তিনি এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। সুবর্ণচর উপজেলা বন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, বন বিভাগের গাছ কাটা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতি সর্ববিদ্যা জানান, মাদ্রাসার কারনে যদি সরকারি বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়ে তাহলে এবিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।