সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
…….স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে ভাবমূর্তির সংকটে নিপোতিত আমাদের বাংলাদেশ। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে পজিটিভ হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। মিথ্যা তথ্যে বিদেশ গমন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লাখ লাখ প্রবাসীর অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার আঁধার আরও ঘুনীভূত হচ্ছে। প্রাবাসীদের জীবনে এই অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে ভুয়া সাটিফিকের্টের কারণে।
করোনার মোকাবিলায় পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে শৈথিল্যতা,Ñ তার প্রমাণ হচ্ছে এইটি। এমন ঘটনা দেশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন ও ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছে। এটির সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাব ফেলবে দেশের ওপর। ইতালীর সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর গত দু’সপ্তাহে হাজারখানেক বাংলাদেশী বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ইতালী ফিরে গেছে। কিন্তু গত সপ্তাহে কাতার এয়ারওয়েজে ইতালী যাওয়া ১৬৮ বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হয় নি। গত ৬ জুন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবী এই দু’টি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা ছিল। এজন্য টিকেট বিক্রির কার্যক্রমও শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু আরব আমিরাত সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিদ্ধান্তের কারণে এই দু’টি রুটে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও ৪ জন বাংলাদেশীর শরীরে করোনার সংক্রমণ প্রমাণিত হওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চার্টার্ড ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাপান।
অন্যদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সব দেশের সঙ্গে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও তা চালু ছিল চীনের সঙ্গে। কিন্তু ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজু শহরগামী একটি ফ্লাইটে ১৭ জন করোনা রোগী পাওয়ার পর চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের বাংলাদেশ-গুয়াংজু রুটে বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। এই যদি হয় বাস্তবতা,Ñ তাহলে এটা দেশের অর্থনীতি খাত নিমজ্জিত হবে এক চরম দুর্দশায়। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
একদিকে, যেমন মহামারী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য খাত,Ñ সেই সঙ্গে এর নানা দুর্বলতার বিষয়টিও উঠে এসেছে সামনে। সরকারী স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশার কারণে দেশে গড়ে উঠেছে বেসরকারী বিশাল একটি চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা। যেখানে নানানতর অভিযোগ রয়েছে আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই অনিয়মগুলো সামনে উঠে এসেছে দ্রুত। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে মাস্ককাণ্ড। এন-৯৫ মাস্কের কথা বলে কেনা হয়েছে নিম্নমানের মাস্ক। সেগুলো সরবরাহের পর প্রশ্ন উঠলে খবর জানা যায় কিছু হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ারও। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী দুষ্ট বলয় তৈরী হয়েছে।
সিন্ডিকেটটি এতটাই শক্তিশালী যে,Ñ প্রবাসীদের হয়রানীতে নিপোতিত করেছে ভুয়া সাটিফিকেটের কারণে। বিশেষ করে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ কর্মকাণ্ডে সরকারও পড়ছে বেকায়দায়। এছাড়া, জেকেএস কোনো নমুনা পরীক্ষা না করেই নেগেটিভ/পজিটিভ রেজাল্ট দিয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনার জন্য ভোগতে হচ্ছে সমগ্র প্রবাসীদেরকে।
নানা সূচকে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও এই অগ্রযাত্রার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অপকর্মটি। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, যদি দুর্নীতির এই অপকর্মটি বন্ধ করা না যায়।
সবিশেষ বলব, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ করোনা কীভাবে সামাল দেয়া যাবে,Ñ সে’টি নিয়ে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব যখন চিন্তিত। ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু দুষ্ট মানুষের জন্য দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়া কোনোভাবেই যেন বরদাশত করা না হয়।
© All rights reserved © 2020 DailyAmaderChuadanga.com
www.